Thunder Clouds Prevent palm trees |
বছরের বিভিন্ন সময় পত্র-প্রত্রিকার পাতা খুললেই দেখতে পাই,দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে এত জন মারা গেছেন।আসুন জানার চেস্টা করি কেন কিভাবে এর সৃস্টি হয়।বায়ূমন্ডলের উপরের অংশে নীচের তুলনায় তাপমাত্রা কম থাকে।এ কারনে অনেক সময় দেখা যায় যে,নীচের দিক থেকে উপরের দিকে মেঘের প্রবাহ হয়।এ ধরনের মেঘকে থান্ডার ক্লাউড ( Thunder Clouds) বলে।
বজ্রপাতে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার কৌশলঃ
বিশিষ্ট আবহাওয়াবিদ ড. সমরেন্দ্র কর্মকার জানান, বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচার কৌশল বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো সম্ভব।
মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশের আগে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। সাধারণত মার্চ থেকে শুরু করে মে পর্যন্ত চলে এ ঝড়। আগেরদিনে গ্রামের মানুষ বলত বৈশাখ মাসের ১২ তারিখ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের ১৩ তারিখের মধ্যে বেশি কালবৈশাখী ঝড় হয়ে থাকে। কালবৈশাখী ঝড়ের সময় বেশি বজ্রপাত ঘটে এবং মানুষ বেশি মারা যায়। আবহাওয়া বিজ্ঞানে বলা হয়, গ্রীষ্মকালে দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে বাতাস গরম হয়ে উপরে উঠতে থাকে। জলীয়বাষ্পও উপরে উঠে আর মেঘের ভিতর যত বেশি পরিমাণে জলীয়বাষ্প ঢুকবে তত বেশি উলম্ব মেঘের সৃষ্টি হবে। এ সময় ‘আপ ড্রাফ’ এবং ‘ডাউন ড্রাফ’ বাতাসে চলতে থাকে। একে বলা হয় বজ্রমেঘ। মেঘের উপরের অংশে পজেটিভ এবং নিচের ও মধ্য অংশে নেগেটিভ বিদ্যুত্ তৈরি হয়। পজেটিভ ও নেগেটিভ মেঘের ভিতরের বিদ্যুত্ আধারে দূরত্ব বেড়ে গেলে প্রকৃতির নিয়মে ভারসাম্য আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পজেটিভ ও নেগেটিভ মেঘ থেকে বিদ্যুত্ আদান-প্রদান শুরু হয়। পজেটিভ ও নেগেটিভ বিদ্যুত্ সঞ্চালন শুরু হলে বজ্রের সৃষ্টি হয়। আর তখনই বজ্রপাত হতে থাকে। পজেটিভ ও নেগেটিভ মেঘ একত্র হলে বিদ্যুত্ সঞ্চালনের ফলে বাতাসের তাপমাত্রা ২০ হাজার ডিগ্রি থেকে ৩০ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে থাকে। মেঘের ভিতর থাকা নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাসের সমপ্রসারণ ঘটে। গ্যাসের কম্পনের ফলে মেঘের গর্জন সৃষ্টি হয়। বজ্র সৃষ্টি হয়ে তা পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়াটিও বেশ জটিল বলে জানান ড. সমন্দ্রে কর্মকার। বজ্রপাতে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাও খুবই কঠিন। তবে সতর্ক হলে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো যেতে পারে বলে তিনি জানান।
মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশের আগ মুহূর্তে ঘন কালো মেঘ দেখলেই সাবধান হতে হবে। গুরগুর মেঘের ডাক শুনলেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে। পাকা বাড়িতে আশ্রয় বেশি নিরাপদ। গাড়ির ভিতরও আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। গাছের নিচে, টেলিফোনের খুঁটির পাশে বা বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের খাম্বার পাশে দাঁড়ানো মোটেই নিরাপদ নয়। ফাঁকা মাঠের মধ্যে অবস্থান সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক বলে তিনি জানান। পানির সংস্পর্শে মোটেই যাওয়া যাবে না। মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে কালবৈশাখী দুপুরের পরে হয়ে থাকে। এরপর মে’র শেষ পর্যন্ত সকালেও হয়ে থাকে। পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর আকাশে মেঘের গুরগুর গর্জন শুরু হলে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে। পূর্ব, উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে বিদ্যুত্ চমকালে বজ্রপাতে মৃত্যুর আশংকা কম থাকে। আর বৃষ্টি ও মেঘের গর্জন না থামা পর্যন্ত নিরাপদে থাকা বাঞ্ছনীয় বলে জানান ড. কর্মকার। বজ্রপাতের আওয়াজ শোনার আগেই তা মাটি স্পর্শ করে। সোজাসুজি মানুষের গায়ে পড়লে মৃত্যু অবধারিত। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে স্পর্শ করাও বিপজ্জনক। শুকনা কাঠ দিয়ে ধাক্কা দিতে হবে। তিনি জানান, বজ্রপাতের সম্ভাবনা আবহাওয়া বিভাগের রাডারে ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘নাউকাস্টনিং’ পদ্ধতিতে মিডিয়াতে প্রচার করতে হবে, যাতে মানুষ নিরাপদ স্থানে যেতে পারে। এতে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। ঝড়ের পূর্বাভাস দেখলে কখনো খোলা মাঠ, পাহাড়ের চূড়া, সমুদ্রসৈকতে অবস্থান করবেন না। গাছের নিচে, বিদ্যুতের খুঁটি বা তারের নিচে, পুরনো-জীর্ণ বাড়ির নিচে অবস্থান করবেন না। চলন্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে গাড়িতে অবস্থান করুন। কোনো কর্ডযুক্ত ফোন ব্যবহার করবেন না। মাটির সঙ্গে সংযু্ক্ত ধাতব পদার্থে হাত বা হেলান দিয়ে দাঁড়াবেন না। বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত পানির ফোয়ারায় গোসল করবেন না। মরা কিংবা পচন ধরা গাছ ও খুঁটি কেটে ফেলুন। বাসা, অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হলে বিদ্যুতে সব সুইচ বন্ধ রাখুন, দরজা-জানালা ভালোমতো বন্ধ রাখুন। এ সময় সর্তক করার আরেকটি কারণ হচ্ছে, এপ্রিল, মে, জুন_ এ তিন মাস আমাদের দেশে হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা বেশি থাকে। সবাই সচেতন হই, নিরাপদ থাকি_ এটিই প্রত্যাশা।
বজ্রপাত, পরিবেশ বিপর্যয় ও ইসলাম
বজ্রপাত নিয়ে নানা ধরনের ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। আমরা সেদিকে যেতে চাই না। আমরা মনে করি এটা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটা যে কোনো সময় ঘটতে পারে, এই অমোঘ সত্যবাণী অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তবে, আবহওয়াবিদরা বলেন, বেশি গাছপালা থাকলে বজ্র গাছের মধ্যে পড়লে জানমালে ক্ষতি কম হতো। বিষয়টি যে পরিবেশ বিপর্যয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা পরিবেশের প্রতি যত্নবান হলে নিশ্চয়ই পরিবেশ আমাদের সঙ্গে এমন বিরূপ আচরণ করত না। আশা করি সমূহ বিপদ থেকে রক্ষা পেতে আমরা পরিবেশের প্রতি যত্নবান হবো।বস্তুত প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রকৃতির উপকরণ ইত্যাদি আল্লাহতায়ালার কুদরতের নিদর্শন। পৃথিবীতে কোনো কিছু অনর্থক সৃষ্টি করা হয়নি। সবকিছু মানুষ এবং অন্যান্য সৃষ্টির কল্যাণে সৃষ্টি করা হয়েছে। দুনিয়ায় সবকিছু পরিমিতভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের জন্য অপূর্ব নিয়ামত। এই পরিবেশ ধ্বংস করার কোনো ক্ষমতা মানুষকে দেওয়া হয়নি। মানুষ প্রকৃতির কোনো উপাদান বিনষ্ট করতে পারবে না। এর ধ্বংস বা অযৌক্তিক ব্যবহার করতে পারবে না। প্রকৃতিতে বিচ্যুতি ঘটানো অথবা পরিবর্তন আনা যাবে না।
প্রাকৃতিক পরিবেশ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত ইতিবাচক। ইসলামী জীবনদর্শনে প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের আচরণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার ব্যাপক আলোচনা প্রয়োজন। নিঃসন্দেহে সমকালীন প্রেক্ষাপটে নানা ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় ও দূষণ একটি সমস্যাও বটে। পরিবেশ সংরক্ষণে ইসলামের শিক্ষা ও মূল্যবোধই পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
গাছপালা, ফলমূল, নদীনালা, পাহাড়-পর্বত, পশুপাখি ও নানা ধরনের খাদ্যশস্য আল্লাহতায়ালার অন্যতম নিয়ামত। আরও লক্ষ্য করলে দেখা যায়, চন্দ্র-সূর্যের আবর্তন, বাতাস, বৃষ্টি, মেঘ-ছায়া রৌদ্র ও নদীর পানি ইত্যাদি নিদর্শন জ্ঞানীদের চিন্তার খোরাক জোগায়। দুনিয়ায় আল্লাহর এত নিয়ামত রয়েছে, যা হিসাব করে শেষ করা যাবে না। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না।’ -সূরা ইবরাহিম : ৩৯
কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নিয়ামত অস্বীকার করবে?’ -আর রাহমান : ১৩
মানবজাতি এ কারণে অনেক সৌভাগ্যবান যে, দুনিয়ার সব প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ ভোগ-ব্যবহার করার এখতিয়ার তাদের দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা মানবজাতি ও অন্যান্য সৃষ্টির কল্যাণে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃতির সব সম্পদ ও উপকরণ সঙ্গত ব্যবহারের অধিকার দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা কোনো কিছু অনর্থক সৃষ্টি করেননি। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং তাদের মধ্যে কোনো কিছুই অনর্থক সৃষ্টি করিনি।’ -সূরা আদ দোখান : ৩৮
আল্লাহতায়ালা মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ, পশুপাখি, জীবজন্তু, গাছপালা, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, খাল-বিল সৃষ্টি করে প্রকৃতিতে এক শৃঙ্খলাময় ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। এই ব্যবস্থাপনার কোনো একটি উপকরণের কোনোরূপ ক্ষতি, বিনাশ, ধ্বংস, অপচয় হলে প্রকৃতির এই ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি দেখা দেয়; পরিবেশে সংকট সৃষ্টি হয়।
মনে রাখতে হবে- প্রকৃতিতে সব প্রাণী, জীব ও উদ্ভিদের বসবাস করার অধিকার রয়েছে এবং এ অধিকার আল্লাহ প্রদত্ত। পরিবেশের কোনোরূপ ক্ষতি করা হলে অর্থাৎ বন-জঙ্গল উজাড় করা, পাহাড় কাটা, নদী-নালা ভরাট করা ও বাঁধ দেওয়া ইত্যাদি জাতীয় কাজের দ্বারা প্রকৃতিতে বসবাসকারী মানুষসহ অন্যান্য জীব, প্রাণী ও উদ্ভিদের বসবাসের ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি করা হয়। সৃষ্টির স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়। ইসলামী শরিয়তে এসব কাজ কঠিন অন্যায় ও মারাত্মক অপরাধ বলে বিবেচিত। তাই এসব কাজ থেকে মানুষকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। না হলে পরিবেশ আমাদের সঙ্গে এমন বৈরী আচরণ করতেই থাকবে; আর এটাই স্বাভাবিক। অন্যভাবে বলা যায়, এটা আমাদের পাওনাও বটে, যা আমরা নিজ হাতে কামাই করেছি।
এ কথা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই, প্রকৃতির সব উপাদান ও সম্পদ, বন-জঙ্গল, নদীনালা ও খালবিল, মরুভূমি ও পাহাড়-পর্বত এমনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে- যা কিনা প্রকৃতিতে একটি চমৎকার ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। মানুষ ও অন্যান্য সৃষ্টির জন্য এরূপ সুষম ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা প্রয়োজনীয়। আল্লাহতায়ালা প্রতিটি জিনিসের গুণগত মান ও পরিমাণ এমনভাবে নির্ধারণ করেছেন, যা তাদের স্বাচ্ছন্দ্যময় বসবাসের জন্য উপযুক্ত। আল্লাহ প্রদত্ত এই সুন্দর ব্যবস্থাপনায় মানুষের লোভাতুর দৃষ্টিভঙ্গিই বর্তমান পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী।
তাই সব ধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ, যুক্তিপূর্ণ ভোগ-ব্যবহার, বিজ্ঞানভিত্তিক উন্নয়ন ও উৎপাদন আবশ্যক। কোনো অবস্থায় প্রাকৃতিক পরিবেশের ধ্বংস বা বিনাশ করা যাবে না, এমনকি অপচয়ও করা সমীচীন হবে না। পর্যাপ্ত এই প্রাকৃতিক পরিবেশের অনৈতিক ও বেআইনি ব্যবহার হ্রাস করতে হবে। ক্ষতিকর নানা উপাদান থেকে বায়ু ও পানি দূষণমুক্ত রাখতে হবে। কোনোভাবেই প্রকৃতিতে পরিবর্তন বা বিচ্যুতি ঘটানো যাবে না। প্রকৃতি, প্রাকৃতিক সম্পদ আল্লাহর অপূর্ব নিয়ামত। এসব নিয়ামতের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তবেই এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে সব ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
বজ্রপাত ঠেকাবে তালগাছ । যুগন্তরের নিউজ
বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু কমাতে সম্প্রতি সারা দেশে ১০ লাখ তালগাছ রোপণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও কয়েক লাখ তালগাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। টেস্ট রিলিফ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় তা রোপণ করা হবে।
জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া যুগান্তরকে বলেন, দেশে বজ্রপাত দিন দিন বাড়ছে। গত বছর দেশে বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন কয়েকশ’ মানুষ। এর মধ্যে একদিনেই মারা যায় ৮২ জন। বিষয়টি তখন সংবাদমাধ্যমসহ সর্বত্র ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। পরে বজ্রপাতকে আমরা দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে এর প্রতিরোধে করণীয় উপায় খুঁজতে থাকি। তালগাছ বজ্রপাত ঠেকাতে পারে বিশেষজ্ঞদের এমন মতামত পাওয়ার পর রাস্তার দু’ধারে তালগাছ লাগাতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের কাছে দেশে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান নেই। আবহাওয়া অধিদফতরের হিসাবে, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেড় হাজারের মতো মানুষ মারা গেছেন বজ্রপাতে। দুর্যোগ ফোরামের গবেষণামতে, ২০১১ সালে ১৭৯ জন মারা যান, আর ২০১৫ সালে ২৭৪ জন। ২০১৬ সালে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষ মারা যান বজ পাতে। এত মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে সরকারের শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত। গত বছর দেশে বজ পাতে মৃত্যুর শিকার মানুষের বেশিরভাগই হাওর অঞ্চলের ৯ জেলার। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ছিল সুনামগঞ্জে। বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চল ছাড়াও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ফসলের মাঠে বা ফাঁকা জায়গায়। পাশাপাশি বজ্রপাতে প্রচুর গবাদি পশুরও মৃত্যু হয়েছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত আছে, আগে বজ্রপাত হলে তা তালগাছ বা অন্য কোনো বড় গাছের ওপর পড়ত। বজ্রপাত এক ধরনের বিদ্যুৎ রশ্মি। ওই রশ্মি গাছ হয়ে মাটিতে চলে যেত। এতে মানুষের তেমন ক্ষতি হতো না। কিন্তু গ্রামের পর গ্রাম ঘুরলেও এখন আর তালগাছ দেখা যায় না। একইভাবে বড় আকারের গাছও এখন তেমন নেই। দেশব্যাপী বনায়ন হলেও তা আকারের দিক থেকে বড় হয়ে ওঠেনি। মূলত এ কারণে বজ্রপাতে অনাকাঙিক্ষষত মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গণমানুষের এ ধারণার সত্যতা উঠে এসেছে বিশেষজ্ঞদের গবেষণাতেও। সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তারা বজ্রপাত ঠেকানোর উপায় খুঁজতে থাকেন। তারা বলেন, নিজের মাথায় বজ পাতের আঘাত নিয়ে যেসব বড় গাছ মানুষকে রক্ষা করে তার অন্যতম তালগাছ। বজ পাত যেহেতু সাধারণত উঁচু কোনো কিছুতে আঘাত করে, সেজন্য বজ পাত ঠেকাতে উঁচু গাছ হিসেবে তালগাছকে বেছে নেয়া যেতে পারে। তাদের ভাষায়, বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকানোর জন্য এটাই সবচেয়ে কার্যকর স্থানীয় প্রযুক্তি। থাইল্যান্ডে তালগাছ রোপণের পর বজ্রপাতে মৃত্যু কমেছে এমন তথ্য যাচাই করে বাংলাদেশেও তালগাছ রোপণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি নারিকেল গাছ লাগানোর বিষয়টিও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এছাড়া হাওর অঞ্চলে টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল বলেন, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে উঁচু গাছ হিসেবে তালগাছকে বেছে নেয়া হয়েছে। থাইল্যান্ডে তালগাছ লাগিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। সেখানকার বিশেষজ্ঞের পরামর্শও বাংলাদেশ নিয়েছে। টাওয়ার নির্মাণ প্রসঙ্গে শাহ কামাল বলেন, ভিয়েতনামে টাওয়ার দিয়ে মৃত্যুর হার কমানো হয়েছে। হাওর এলাকায় তালগাছের পাশাপাশি টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য ভিয়েতনামের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হলে বজ পাতে মানুষের মৃত্যু কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে।
তালগাছ লাগানোর নির্দেশনা সংবলিত চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হাসান শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘টিআর-কাবিটা কর্মসূচির আওতায় রাস্তার দু’পাশে তালগাছ লাগানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমরা তালগাছের চারা সরবরাহ করতে উপজেলা কৃষি অফিসগুলোকে বলেছি।’